
কলেজে পড়াকালিন সময় থেকে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের’ প্রতি একটা ‘জেলাসি’ কাজ করতো, বলতে পারেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘করুনা’ হতো। করুনা হওয়ার একটা কারন হলো, আমাদের কলেজের স্যারেরা কখনো ঢাকা মেডিকেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েট, এই তিনটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে কোত্থাও পড়ার জন্য ইন্সপায়ার করতেন্না। যা আসলে সবসময় ঠিকনা। এমন অনেক দেখেছি, যদি কেউ এই তিনটার বাইরে কোথাও পড়ার জন্য সামান্য ইচ্ছাও পোষাণ করতো, তাদের কে স্যারেরা অনেক বাজে ভাবে অপমান করতো। আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টা তেমনি ছিলো। রাজশাহী বিভাগের ঐ সময়ের সেরা কলেজে পড়ার দরুন আমারো কখনো ইচ্ছা ছিলোনা আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো।ভাগ্যের কি খেলা, আমি এখান থেকেই এই বছর BIOTECHNOLOGY তে অনার্স শেষ করে ফেললাম, এবং আমি বলতে চাইঃ ‘I am lucky to be part of it’s glorious history.’
আমি ভর্তি পরীক্ষার সময় সবমিলিয়ে মাত্র ৪ টি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তার মধ্যে একটা ছিলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের F ইউনিট। F ইউনিটে বায়োটেকনোলজি ছিলো এক নাম্বার সাব্জেক্ট। সেটা দেখেয় ভর্তি ফর্ম টা উঠানো হয়েছিলো। কলেজ জীবন থেকেই ডক্টর হবার পাশাপাশি এই সাব্জেক্ট এর প্রতি আমার বেশ দুর্বলতা ছিলো। পরীক্ষার পর যে তিনটা যায়গাই ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলাম তার মধ্যে থেকে ‘AFMC’ ছিলো একটা। যদিও ‘ISSB’ থেকে তৃতীয় দিন রিজ়েক্ট হয়ে যাওয়াই সেখানে আর পড়ার সুযোগ হইনাই। আর বাকি থাকলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদযালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয় না আসাই ভর্তি হয়ে গেলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জ়েনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজ়ি’ বিভাগে। ইচ্ছা ছিলো দ্বিতীয় বার মেডিকাল পরীক্ষা দিবো। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর অসাধারন নির্মলতা আর প্রাণের বিভাগ জিইবি’র প্রেমে পড়ে আর তা কখনই দেওয়া হয়ে উঠলোনা।
এ্যাডমিশন জীবনের বিষন্নতা, মন খারাপ আর ভালো না-লাগা বিষয় গুলোকে যে জিনিষটা মুছে দিতে পেরেছিলো সেটা হলো এই ক্যাম্পাসের মুক্ত পরিবেশ আর অসাধারন কিছু মানুষ। মনে আছে আমরা যখন প্রথম ভর্তি হই, তখন দেশের রাজনৈতিক অবস্থা খুব বাজে ছিলো; হরতাল, মিছিল, মিটিং এসবি চলতো সবসময়। এসব অনর্থক কারনে প্রায়দিনই আমদের ক্লাস অফ থাকতো। সেই সুযোগ টাকে কাজে লাগিয়ে আমরা সব বন্ধু মিলে টই-টই করে ঘুরে বেড়াতাম ক্যাম্পাসের এক কোনা থেকে আরেক কোনা। সকালে আসতাম ক্যাম্পাসে, রুমে ফিরতাম রাত ১০-১১ টা নাগাদ। কখনো প্যারিস রোড, কখনো বদ্ধভূমি, কখনো চারূকলা হয়ে সিলসিলা। আমরা ৭৫৩ একরের সবুজ মতিহার চত্তরটাকে নিজেদের মতো করে প্রতিদিন আবিস্কার করতাম ।
প্রথম পিকনিক, প্রথম নবিনবরন, প্রথম ক্লাস, প্রথম ক্লাস টেস্ট, প্রথম বৈশাখ সবকিছুর সাথে ক্যাম্পাসের মন ভুলানো বিশালতা প্রতিদিন যোগ করতে থাকলো নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। দিন গুলো যেতে থাকলো, সময় গুলো আশে পাশের মানুষগুলোকে আস্তে আস্তে পুরোন বানানো শুরু করলো। সামনে এনে হাজির করলো জীবনের প্রকৃত বাস্তবতা, নির্মম স্বার্থপরতা আর ব্যর্থতার গ্লানি। এসবের মাঝে যখন আশের পাশের সব চেনা মানুষ কে খুজে পাওয়া দুস্কর হয়ে যাচ্ছিলো, তখন এই ক্যাম্পাস চিনালো তার জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমৃদ্ধতা। জানালো কিভাবে ব্যর্থতা থেকে ভেঙ্গে ঘুরে দাড়াতে হয়, জানালো কিভাবে নিজেক জয় করতে হয়, শেখাল কিভাবে চলতে হয় জীবনের অসমান পথে।
একে একে দিন, মাস, বছর সব পার হয়ে যেতে লাগলো। ক্লাস, ল্যাব, এবং টিউশনি গুলো যখন জীবন কে বড্ড যান্ত্রিক করে তুলতো, তখন এই ক্যাম্পাস ই ছিলো সবসময়ের জন্য মুক্ত অক্সিজেন। ভীষন মানসিক প্রেসারের মধ্যেও বিনোদপুর গেট হয়ে বদ্ধভূমি কিংবা মেডিকালের সামনে থেকে সিলসিলা পর্যন্ত সোজা রাস্তাই ৫-১০ মিনিটের ‘Lonely Walk’ জীবন কে দিতো নতুন করে ঘুরে দারাবার প্রতিজ্ঞা। তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের ৪২০ থেকে ৪২৬ নং পর্যন্ত সমস্ত রুমে অযস্র হাসি, ঠাট্টা আর ক্লাসের ফাকে একজন আরেকজনের সাথে দুষ্টুমি, আমাদের নবীন বরনে ডিপার্ট্মেন্টের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তূর্য ভাইয়ার মন ভুলানো ডিজে ড্যান্স, আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট প্রতিযোগিতাই ব্যাটিং নেমে এ রান করে ম্যাচ জেতানোর পর সিমাহীন আনন্দ, জোহা চত্তরের শরিফুল মামার মুড়ি মাখানে, কিংবা স্টেশন বাজারের ‘সিস্টেম’ খাওয়ার পর অসাধারন বলে চিক্কর দেওয়া, সব কিছুই স্মৃতির পাতাই একেকটা করে সুখের পেরেক।
আজ ও জীবন যখন বিষন্ন হয়ে উঠে, সব চিন্তা যখন চেপে ধরে তখন এই ক্যাম্পাস ই হয়ে উঠে একমাত্র মুক্তির পাথেও। আজ থেকে দশ বছর পরে যখন ক্যাম্পাসে আসা হবে তখনো হইতো সাবাস বাংলা অথবা হবিবুরের মাঠের হাজারো স্মৃতির কথা মনে পড়ে শরীরের প্রতিটা লোমকুপ দাঁড়িয়ে যাবে।
Oh! Those were the days, undoubtedly the best days of my life. Dear RU, despite all adversity and limitations, always try to spread love, dignity, and magnitude for the freshers, sophomores and new graduates.
Amit Hasan, Graduate, Genetic Engineering and Biotechnology