সাল ২০১৭, ঘড়িতে বেলা ৩ টা বেজে ত্রিশ মিনিট। গ্রীষ্মের দুপুর, রাজশাহীর কাঠফাঁটা রোদে বাইরে চোখ ফেলা মুশকিল। আরামের ভাত-ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো গরমের কারনে। যথারিতী শরীরের একপাশটা ঘেমে লেগে গেছে চাদরের সাথে। বিরক্তিকর অবস্থা থেকে মুক্ত হতে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। চা-এর জন্য পানি গরম করতে দিলাম হিটারে। ক্যাম্পাসে তখন ছুটি চলতেছে – যতদূর মনে পড়ে গ্রীষ্মের। পরিচিত মানুষজন তেমন একটা নেই রাজশাহীতে। যথারিতী ভালো-মন্দ মুডের উঠানামার মধ্যে দিয়ে জীবন যাচ্ছে। পানি গরম হয়ে এলে লেবু-আদা দিয়ে এক কাপ-ভর্তি চা বানায়ে নিয়ে টেবিলে বসলাম। চা-এ চুমুক দিতে দিতে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম। ভরদুপুরে উদাস মন বলতেছে নতুন একটা বই পড়া শুরু করা দরকার – একটু ভিন্নধর্মি, কোন এক ফিল্ডের রিসার্চ নিয়ে – লম্বা বরিং ছুটিতে জীবনে একটু স্বাদ ফিরিয়ে আনতে হলেও।
মাস খানেক আগে ওয়াসিংটন পোস্টের একটা আর্টিকেল পড়তে গিয়ে নরমান ডয়েডজ নামক এক বিজ্ঞানির (এমডি) নাম জেনেছিলাম – নিউরপ্লাস্টিসিটি ফিল্ডে অনেক জনপ্রিয়। সাধারন মানুষের জন্য লেখা তার একটা বিখ্যাত বই আছে এটাও পড়েছিলাম। বইটা পরে পড়বো বলে আর্টিকালটা সেভ করে রেখেছিলাম বুকমার্ক হিসাবে। তৎক্ষণাৎ বইটার নাম মনে করতে পারতেছিলামনা, কিন্তু বুকমার্ক থেকে খুঁজে বের করতে তেমন কষ্ট হলোনা। বইটার নাম ছিলো ‘The Brain that Changes Itself’ (বইটা আসলে আমার জীবন চেঞ্জ করে দিছিলো)। ল্যাপটপের স্ক্রিনে তখনো বই পড়ার অভ্যাস হয়ে উঠেনি, তাই একটু বেলা পড়তেই বই-এর পিডইএফ টা পেন-ড্রাইভ এ নিয়ে বিনোদপুর বাজারে গেলাম প্রিন্ট করতে। সন্ধ্যার মধ্যে বইটা প্রিন্ট করলাম, তারপর একদম বাধায় করে নিয়েই রুমে ফিরলাম। বই বাধায়ের আঙ্কেল এত তাড়াতাড়ি সাধারনত কাজ করে দেইনা – অন্তত একদিন সময় লাগে। কিন্তু ক্যাম্পাস ছুটি, তার কাছে তেমন কোন কাজ জমে নেই – তাই করে দিলো আমাকে বসিয়ে রেখেই। এক কাপ চায়ের সাথে হলো গল্প খানিকটা – তার জীবন আর আমার জীবনের বর্তমান হালচাল নিয়ে। এরপর মাগরিব পড়লাম এবং গরম গরম গরম বাধায় করা বইয়ের গন্ধ নিতে নিতে রুমে ঢুকলাম।
পরের দু তিনদিন বইটার মধ্যেই ডুবে ছিলাম। বইটাতে নিউরপ্লাস্টিসিটি ফিল্ডের এল্পিকেশন নিয়ে ৭ টার মতো রিয়াল কেইস স্টাডি – মেইনলি ক্লিনিকাল পেশেন্টদের – অনেক সুন্দর করে বর্ণনা করা ছিলো। আমার এতো ভালো লাগলো বইটা – বলে বোঝানোর মতো না। শেষ করার পর মনে হতে লাগলো, ইস! যদি এরকম না হলেও কাছাকাছি কোন রিসার্চ করতে পারতাম বড় হয়ে। বইটা শেষ করার পর থেকেই কিভাবে নিউরসাইন্স ফিল্ডে যাওয়া যায়, বায়োটেকনোলজি ফিল্ড থেকে, সেটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে লাগলাম ইন্টারনেটে। নেক্সট এক সপ্তাহ এর মতো এই একটা ঘোরের মধ্যেই ছিলাম। এর মাঝে নিউরসাইন্সের কিছু লেকচার সিরিজ ইউটিউব থেকে দেখে শেষ করলাম, এই ফিল্ডে বড় বড় রিসার্চার দের টেড টক শুনলাম – বোঝার জন্য যে আমার আসলেই কি নতুন করে জন্মানো এই ‘প্যাশন’ টা দীর্ঘস্থায়ি না অন্যসব সময়ের মতো ফ্লিটিং।
যাইহোক, প্রায় দু সপ্তাহ নিজের চিন্তাগুলোকে ঠান্ডা মাথায় অব্জার্ভ করে যা বোঝলাম, তা ছিলো বেশ সাপ্রাইজিং। আমার মনে হলো জীবনের প্রথম আমার কি নিয়ে রিসার্চ করা উচিত তার জন্য ভিতর থেকে ‘সত্য’ একটা প্যাশন খুঁজে পাচ্ছি। কোন ভাবেই এই চিন্তা টা মন থেকে সরাতে পারতেছিলামনা। পাওলো কয়েলহো তাঁর এলিভেন মিনিটস (মাস্ট রিড বাই দ্য অয়ে) বইয়ে লিখেছিলো,
Passion makes a person stop eating, sleeping, working, feeling at peace. A lot of people are frightened because, when it appears, it demolishes all the old things it finds in its path.
আমার দশাটা ছিলো অনেকটা এরকম।
এর পর থেকে মনের মধ্যে এই প্যাশনটা বড্ড যত্ন করে বড় করতে লাগলাম – সবার আড়ালে। মাঝখানে ইমোশোনের জোরে নিউরসাইন্সের একটা টেক্সবুক পুরো পড়ে শেষ করেছিলাম। কিন্তু মনের মধ্যে সবসময় চিন্তা কাজ করতো – কিভাবে আমি বায়োটেকনোলজি থেকে নিউরসাইন্সে মুভ করবো। কারন আমাদের ডিপার্টমেন্টে যা রিসার্চ হতো, সব মেইনলি দুটো ভাগে ভাগ করা যায়ঃ প্লান্ট সাইন্স এবং মলিকুলার মাইক্রোবায়োলজি। তাই এই জিনিসটা একটু গভীরভাবেই ভাবাতো। কিন্তু মনে মনে আশা রাখতাম, ফোর্থ ইয়ারের লটারিতে কোন একটা ভালো ল্যাব পাবো, ঐ ল্যাবের স্যারকে ম্যানেজ করবো রিসার্চ প্রপোজাল দিয়ে – অল্প হলেও যাতে রিসার্চ প্রজেক্টে নিউরসাইন্সের কাজ থাকে – ফাইনাল প্রজেক্ট দাড় করাবো।
অল্প বয়সের মন – নিজেকে অনেক কিছু দিয়ে বোঝ দিতে চেষ্টা করতাম। যদিও পরে বোঝেছি আমাদের দেশের রিয়ালিটি টা অনেক কঠিন। তারপরেও অবুঝ মন হাল ছাড়তে চাইতোনা। তবে মোটিভেশন ধরে রাখার জন্য রেগুলার সাইন্টিফিক আমেরিকান সাইট এর মাইন্ড এন্ড ব্রেইন নামক ট্যাব থেকে নিউরসাইন্সের টপ রিসার্স স্টোরিগুলো পড়তাম। মাঝে একটা ব্লগ সাইটও বানিয়েছিলাম, প্লান ছিলো নিউরসাইন্সের হিস্টোরি শুরু থেকে কাভার করে একটা ধারাবাহিক এবং কোহেরেন্ট সিরিজ লেখবো। কয়েক পর্ব লেখেছিলামও, অনেকগুলো বই থেকে ইনফোরমেশন নিয়ে। কিন্তু পরে কোন এক লম্বা ইয়ার ফাইনালের প্রেসারে সেটা আর ধরে রাখতে পারিনি।
ধিরে ধিরে দিন চলে যাচ্ছিলো, মাস গড়িয়ে বছর পার হচ্ছিলো; অন্যদিকে আমার রিসার্চ প্যাশন আগের মতই থাকলেও আশেপাশের অবস্থা দ্রুত নেগেটিভলি পরিবর্তন হতে থাকে। যেই ফোর্থ ইয়ার এর প্রোজেক্ট নিয়ে অনেক আশা ভরসা ছিলো, সেখানে লটারির ভাগ্যটা ছিলো আমার সবচেয়ে খারাপ। লটারিতে রিসার্চ করার মতো কোন ল্যাবই পড়লোনা; লটারিতে যা পাইলাম তা নিয়ে হইতো আরকদিন বিস্তারিত লেখা যাবে। একটা টোটাল ব্লগই ডেডিকেট করা দরকার ঐ ইমোশনটা রিলিজ করতে, হা হা হা!! যাইহোক, ফোর্থ ইয়ারের শেষের ছয়টা মাস আমার কিভাবে যে গেলো তা এখনও মনে হলে দম বন্ধ হয়ে আসে। ক্লাস শেষে আমার সব ক্লাসমেটরা ল্যাবে যায়, আর আমি রুমে আসি – কারন আমার কোন কাজ নাই, আমার কোন সে-অর্থে ল্যাবই নেই। কতদিন মেইন গেট থেকে অটোতে রুমে আসতে আসতে চোখের কোনে পানি জমে গেছে অজান্তে তার কোন নির্দিষ্ট নাম্বার নেই।
আমার আশে পাশের অনেকে আমাকে বিভিন্নভাবে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করতো, অনেকে বললো কম্পিউটিশনাল কেমিষ্ট্রি তে মুভ করার জন্য – তাহলে অল্প সময়ে অনেক রিসার্চ পেপার করতে পারবো – আল্টিমেটলি স্কলারশিপে হেল্প হবে। আমি জোর করে কয়েকবার চেষ্টাও করেছিলাম মুভ করতে – কারন আমি কাজগুলোতে ট্রেইন্ড ছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন পরেই মনে হতো, এটা তো আমার করার কথা না, আমার তো করার কথা অন্য কিছু। তবে কিছু মানুষ আমাকে ঐ দূর্দিনে তাদের রিসার্চ প্রজেক্টে ইনভোল্ভ করেছিলো – যাস্ট পেপার লেখার কাজে। কাজের থিমগুলো আমার প্যাশনের না হলেও সময় কাটানোর জন্য ঐ ইনভল্ভমেন্টগুলো ভালো ছিলো – কারন যেকোন ধরনের লেখালেখি আমার ভালো লাগতো। ডিপ্রেশন এর কড়া গন্ধ থেকে মুক্ত থাকার জন্য সেইসব দিন-রাত্রি গুলো ছিলো অনেক ভাবসা গরমের পরে এক পশলা বৃষ্টির মতো। আমি তাঁদের কথা মনে রাখবো – সারাজীবন।
দেখতে দেখতে এভাবেই ফোর্থ ইয়ার শেষ হয়ে গেলো। মাস্টার্সের শুরুর দিকে ভাবলাম, প্লান্ট বায়োটেকনোলজিতে যেহুতু দু একটা পেপার হলো (কোলাবরেটিভ কাজ করে), তাহলে এই সেক্টরে মুভ করা যায় – জীবনটা সহজ হয়ে যাবে। সাথে মাস্টার্সের থিসিসও এই ফিল্ডে করি – আর যদি একটা পেপার হয় তাহলে সবমিলিয়ে একটা শক্ত প্রোফাইল হবে। কিন্ত যেই লাউ সেই কদু!! – মাস্টার্সে কাজ নিলাম প্লান্ট ফিল্ডকে টার্গেট করে, কিন্তু ল্যাবের দম বন্ধ হয়ে আসা পরিবেশ, রেগুলেশন বিহীন রিসার্চ কালচার আমার জীবনকে আরো টক্সিক বানায়ে দিলো। কিছুদিন পর থেকে ল্যাবে গেলে ফাঁপড় লাগতো – কখন রুমে ফিরবো এই চিন্তা নিয়ে থাকতাম।
সবঘটনার মাঝে হঠাৎ লক্ষ করলাম আমার মধ্যে ‘কনফিডেন্স’ এর বেশ অভাব দেখা দিচ্ছে – আমার মনে হতো ‘আমি সম্ভবত রিসার্চ এর জন্য পারফেক্ট না। তাছাড়া আমার এমন লাগবে কেনো? হিসাবে তো ল্যাবে থাকতেই ভালো লাগার কথা – তাই না?’ নিজের কাছে নিজে এভাবে প্রশ্ন করতাম উত্তর খোঁজার জন্য। ডিফিনিটিভ কোন উত্তর পেতামনা। রুমে ফিরে অধিক পরিমান কার্বোহাইড্রেট আর অল্প পরিমান প্রোটিন দিয়ে পেট পুরতাম আর ডিপ্রেশনের বিলাসিতা করতাম। এর মাঝে পৃথিবীতে চলে আসলো করোনা ভাইরাস – প্যান্ডেমিক, লকডাইন, আইসোলেশন। জীবন কিসের কি গুছায়ে নিবো, চলে গেলাম মাস দুয়েকের ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনে। কখন ঘুমাতাম, কখন উঠতাম তার কোন ঠিক ঠিকানা ছিলোনা। লকডাউনের প্রথমে ডিপ্রেশনে কেনো গেলাম তা নিয়ে হইতো আরেকদিন লেখা যাবে। হা হা হা!!
লকডাউনের প্রথম দিকে ডিপ্রেশনে পড়লেও, এখন পিছনে ফিরে তাকেলে সেই সময়টা আমার জন্য খুব দরকার ছিলো – নিজের কাছে এমন বলেই মনে হয়। লকডাউন যে কাজটা করলো সেটা হলো নতুন করে আমার সুপ্ত প্যাসনকে জাগ্রত করলো – ঠিক ২০১৭ সালের সেই গ্রীষ্মের দুপুরের মতো। সাথে একটা ডিপ রিয়ালাইজেশন দিলোঃ মানুষের জীবনে যে কাজ আসলেই মন থেকে করতে চাই, তার কিছুটা করে যেতে পারলেই শান্তি। কিন্তু যা চাইনা বা অল্প অল্প চাই, এবং শুধু প্রেসারে পড়ে করতে হয়ে, এমন কিছু কাজে সে অনেকটা বেশি পরিমান আগায়ে গেলেও প্রশান্তি পাইনা। কারন দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আমাদের কন্সাস এবং সাবকান্সাস মাইন্ডের ম্যাচ হয়না – চাওয়া আর কাজের মধ্যে একটা কগনিটিভ ডিজোনেন্স তৈরি হয়। ফলে আমরা নিজদেরকে ঠেলে দিই নায়ালিজমের দিকে।
যাইহোক, প্যান্ডেমিকের প্রথম মাস দুয়েক পর একটা রিসার্চ প্রজেক্ট শুরু করলাম, আমার দুজন কাছের জুনিয়রকে সাথে নিয়ে। কাজটা ছিলো কম্পিউটিশনাল, কিন্তু আমি কিছুটা হলেও টপিকটাতে নিউরসাইন্সের একটা ছোয়া রাখতে চেষ্টা করলাম – যা আমাকে বাড়তি মোটিভেশন দিবে কাজটা শেষ করতে এমন ভেবে। আমাদের টিমের সবার কাজটা শুরু করার আগে প্রায় জিরো নলেজ ছিলো, কিন্তু আমাদের প্লানই ছিলো পুরো কাজটা নিজেরাই একা একা শিখবো, এবং জীবনের একটা মিনিংফুল প্রজেক্ট হিসাবে শেষ করবো – পিয়ারড রিভিউড জার্নালে পাবলিশ করবো – এবং রেখে দিবো প্যান্ডেমিকের মেমোরি হিসেবে। জার্নিটা কোনভাবেই সহজ ছিলোনা। আমরা রেগুলার স্কাইপিতে ঘন্টার পর ঘন্টা মিটিং করতাম, একজনের মোটিভেশন কমে গেলে আরেকজন পুশ করতাম, একজন একটা কাজ প্রথমে শিখলেম তার কাজ ছিলো বাকি দুজনের সাথে শেয়ার করা। পুরো লকডাউনে এই প্রজেক্টটা না থাকলে কি করতাম এটা মনে হলে এখন দম বন্ধ হয়ে আসে।
যাইহোক, অনেক কিছু বাধার মধ্যেও লকডাউনের প্রথম ৬ মাস পার হয়ে গেলো। খুব বেশি প্রোডাক্টিভ সময় না কাটাতে পারলেও তেমন একটা খারাপ লাগতোনা – বেঁচে ছিলাম এইতো বেশি। তবে আমাদের কাজের একটা সেপ ততোদিনে চলে আসলো। কিন্তু কাজটা পাব্লিকেশন পর্যন্ত নিয়ে যেতে এখনো আরো সময় দেওয়া দরকার, সেটা আমরা তিনজনই বোঝতেছিলাম। আগষ্টে বাসা থেকে রাজশাহী ব্যাক করলাম, জিআরি এবং আইএলটস এক্সাম দিলাম। সবকিছু মিলিয়ে জীবনের সবচেয়ে ঘটানাবহুল বছরটা সেখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু তা হলোনা, আসলে কখনোই হয়না – হা হা হা!!। একটা ছোট করে হার্টব্রেক হলো, ফলাফল হিসাবে ডিপ্রেশন আবার ঘিরে ধরলো। সেরকম লেভেলের ডিপ্রেশন আরকি – কিছুই করতে ভালো লাগতোনা। অন্যদিকে যে মাষ্টার্স পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিলো এপ্রিলে সেটা ২০২০ শেষ হয়ে গেলো, শুরুই করতে পারলামনা। মাস্টার্সের যে থিসিসটা শুরু করেছিলাম সেটাও বন্ধ – ল্যাবে যাওয়ার টক্সিক স্বাদটা পর্যন্ত নেওয়া বন্ধ হয়ে রইলো; হা হা হা!!
যাইহোক, এভাবে মাস তিনেক ডিপ্রেসড থাকার পর ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করলাম জানুয়ারি থেকে। সোশাল মিডিয়া থেকে দু মাসের জন্য একটা কমপ্লিট ব্রেকে গেলাম। নতুন বছর, কি হবে পুরাতন সময়ের গান গেয়ে। ততদিনে ডিপ্রেশনে মন-মেজাজ সহ শরীরের সবকিছু বড্ড টায়ার্ড। দেশে মাস্টার্স শেষ করার ইচ্ছে রিতীমত ছেড়ে দিয়েছি ইতোমধ্যে – যদিও শুধু পরীক্ষাটা দেওয়া বাকি ছিলো। সবকিছু ছেড়ে দিয়ে শুরু করলাম বাহিরে আপ্লিকেশন এর কাজ-কাম। অন্যদিকে আমাদের ড্রিম প্রজেক্টের শেষ ভাগটা শেষ করার জন্য নিজেদের একটু স্পিডেই পুশ করলাম – শেষবারের মতো।
বাহিরে এপ্লিকেশনের সময় পিএইচডিতে এপ্লিকেশন করতে ইচ্ছে হতোনা – আসলে বলতে পারেন সাহস হতোনা। নিজের কাছে মনে হতো, আমি এখনো পিএইচডির জন্য রেডি না। ফোর্থ ইয়ারে ল্যাব না পাওয়া, মাস্টার্সের কাজও ল্যাবে গিয়ে ঠিকভাবে প্যান্ডেমিকের কারনে না করতে পারা, নিজের মধ্যে একটা ফেয়ার সৃষ্টি করেছিলো। আমি জানতাম আমি লিটারেচার রিভিউ, পেপার লেখা এবং পেপারের ক্রিটিকাল আনালাইসিস করতে পারি। কিন্তু দিনশেষে ল্যাবে পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ার ইফেক্ট ব্রেইনে ভালোই ক্রিয়েট হয়েছিলো। একারনে শুধু মাস্টার্স এর জন্য এপ্লিকেশোন করা শুরু করলাম।
যথারিতী ভালো খারাপ খবরের মধ্য দিয়েই যাচ্ছিলো এপ্লিকেশনের দিনগুলো। আলহামদুলিল্লাহ!! অল্প কয়েকমাসের মধ্যে প্যারিস স্যাক্লে থেকে স্কলারশিপ পেলাম। সাথে ইউ এসের দুই যায়গা থেকে স্ট্রং রিস্পন্স ছিলো। শেষমেষ ইউনিভার্সিটির মান, টাকা-পয়সা, জীবন মান হিসাব করে প্যারিসে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। তবে প্যারিসের মাস্টার্সে আসার আরেকটা রিজোন ছিলো নিউরোসাইন্সে গবেষনা করার সুযোগ। বিষয়টা একটু বোঝিয়ে বলি। এখানের মাস্টার্স দুবছরের; প্রথম বছর আমার ফিল্ড থাকবে লাইফ সাইন্স এন্ড হেলথ, কিন্তু দ্বিতীয় বছর আমি স্পেশালাইজেশন হিসাবে ৬ টা ফিল্ডের যেকোন এক্টাতে মুভ করতে পারবো। ৬ টা ফিল্ডের মধ্যে নিউরোসাইন্স এবং কম্পিউটিশনাল নিউরসাইন্স ছিলো। আমি যদি একটা ইন্টার্নশিপ ম্যানেজ করতে পারি নিউরসাইন্স ফিল্ডে এবং কয়েকটা ইলেক্টিভ কোর্স নিতে পারি নিউরসাইন্স রিলেটেড তাহলে পথটা অনেক ইজি হবে। অন্যদিকে ইউএসএ তে গেলে সে সুযোগ টা আর থাকছেনা (সেকেন্ড ইয়ারে ভিন্ন কোন স্পেসালাইজড ফিল্ডে মুভ করার মতো সুযোগ সেখানে নেই)।
স্বপ্নকে একটু হলেও ছোয়ে দেখতে কার না ইচ্ছে করে? আমি প্যারিস আসার ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। এখানে আসার আগে এখানের নিউরসাইন্স ইন্সটিটিউট এর রিসার্স টিমগুলোর কাজ ঘুরে ফিরে দেখতাম। কোন কোন টিমে কাজ করার জন্য আপ্রোস করা যেতে পারে তা আসার আগেই ঠিক করেছিলাম। সেপ্টেম্বরে প্যারিস আসলাম; মাঝে আমাদের ড্রিম কাজটা শেষ করে পাব্লিকেশনের জন্য সাবমিট করেছিলাম এপ্রিলের দিকে। সেটার পজিটিভ রেজাল্ট পেলাম আগস্টের দিকে – ফাইনালি পেপারটা পিয়ারড রিভিউড জার্নালে পাবলিসড হলো। মাঝখানে ন্যাশনাল সাইন্টিফিক জার্নালিজম কম্পিটিশনে পার্টিসিপেট করলাম – আল্লাহর রহমতে সেখানে আমার লেখা একটা কন্টেট রানার-আপ হলো – ইংলিস ক্যাটাগরিতে। জীবন সাডেনলি একটু হলেও, ধিরে ধিরে হলেও, ডিপ্রেশনের পুড়া গন্ধ থেকে বের হয়ে আসা শুরু করলো।
প্যারিসে এসেই আমি ইন্টার্নশিপ খোঁজা শুরু করলাম – এখানে ইন্টার্নশিপ ম্যানেজ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং, সে কারনে একটু তাড়াতাড়ি কাজটা শুরু করতে হলো। খোঁজাখোঁজির এক পর্যায়ে এক প্রফেসর (তিহানা) কে পছন্দ হলো– ইন্সটিটুউট অফ নিউরসাইন্স প্যারিস স্যাক্লের। তিহানার ল্যাব পেজ ঘাটাঘাটি করে দেখলাম, তার টিম ড্রসফিলাতে সেন্সোরি-মটর ডিসিশন মেকিং এর নিউরাল সারকিট ডিসকভারি নিয়ে কাজ করে।
তার ল্যাবের মানুষজন জেনেটিক টেকনিক ব্যবহার করে স্ট্রাকচারাল এনাটমি, ক্যালসিয়াম ইমেজিং, টু-ফটন মাইক্রোস্কপি এবং অপ্টজেনেটিক্স টেকনিক ব্যবহার করে ইনভিভো ফাংশনাল স্টাডি, এবং মেশিন লার্নিং ইউজ করে বিহাভিওরাল ডাটার ম্যাথেমেটিকাল মডেলিং করে থাকে। সবমিলিয়ে নিউরসাইন্স ফিল্ডে এডভান্স রিসার্চ করার সব ওপরচুনিটি দেখলাম তার ল্যাবে। তিহানা বছর তিনেক আগে ইউএসএ থেকে ফিরেছে, এবং এখানে টিম লিডার হিসেবে যোগ দিয়েছে। এর আগে বিখ্যাত পাস্তুর ইন্সটিটিউট থেকে পিএইচডি করে ইউএস-এর জেনেলিয়া রিসার্চ ইন্সটিটুয়েটে কাজ করেছে বছর দশেকের মতো। তার ল্যাবের সাথে কলাবরেশন আসে ক্যাম্ব্রিজ সহ চার পাঁচটা টা বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং রিসার্চ ইন্সটিটিউটের। কয়েকদিন সময় নিয়ে তিহানার প্রোফাইল এবং তার রিসার্চ কাজ স্টাডি করলাম। তারপর একটা সুন্দর ই-মেইল লিখলাম। প্রথমে ভাবছিলাম, রিপ্লাই পাবোনা। আমারে কোন কারনে তার ল্যাবে নিবে? হা হা হা!!
গেজ হোয়াট? দুদিন পর সকালে উনি রিপ্লাই দিলো; তারপর ইন্টারভিউ দিলাম; এবং রিতীমত একটা ইন্টেন্স ইন্টারভিউ শেষে উনি আমাকে তার ল্যাবে নিবে বলে জানালেন। ইন্টারভিউ এর রেজাল্ট পাওয়ার পর কি যে একটা অনুভূতি হচ্ছিলো তা বলে বোঝানোর মতো না। চার বছর এর বেশি সময় ধরে দেখা স্বপ্ন পূরন হতে যাচ্ছে। ফাইনালি আমি নিউরসাইন্স ফিল্ডে কাজ করতে যাচ্ছি। রেজাল্ট পাওয়ার পর ২০১৭ এর সেই কাঠফাঁটা দুপুরে ভাতঘুম টা না ভাংলে আসলেই কি এতদূর আসতে পারতাম কিনা তা ভেবে নিজেকে এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিসের দিকে ইন্টেনশনালি ঠেলে দিচ্ছিলাম। হা হা হা!!
যাইহোক, তিহানার নিউরাল সার্কিট এবং বিহাভিওর টিমে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ শুরু করলাম এপ্রিলের ১৯ তারিখ। আমার রিসার্চ ছিলো তিন মাসের মতো। কাজ ছিলো ট্রান্সজেনিক ড্রসফিলা লার্ভার হোল ব্রেইন ডাইসেক্ট করা; ব্রেইন কে ইমিউনোস্টেইনিং করা – এন্টিবডি লেবেলিং বলে অনেকে – এবং তারপর কনফকাল মাইক্রোস্কপিতে ব্রেইনের পিকচার কেপচার করা। আর সব শেষে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ইমেজ অ্যানালাইসিস করা। আমাদের ল্যাবে আমরা মাল্টিপল আন্টিবডি ইউজ করতাম মাল্টিপল প্রোপারটিকে টার্গেট করতে। ধরা যাক একটা এন্টিবডি এক ধরনের সিঙ্গেল নিউরনকে গ্রিন কালার দিয়ে লেভেল করবে; আরেকটা এন্টিবডি ওই সিঙ্গেল নিউরন কি ধরনের নিউরট্রান্সমিটার (গ্লুটামেট, অ্যাাসিটাইল কলিন, গ্যাবা) সিক্রেট করে সেটাকে লেভেল করবে লাল কালার দিয়ে। বলে রাখা ভালো, ব্রেইন ডিসেক্ট করার আগে ড্রসফিলাকে জেনেটিক টেকনিক (Gal4-UAS, LexA-LexAop) ইউজ করে ট্রান্সজেনিক বানানো হয়। তারপর ঐ ট্রান্সজেনিক ড্রসফিলার মেইল-ফিমেলের মধ্যে ক্রস করিয়ে যে লার্ভা পাওয়া যায় তার ব্রেইন নিয়ে কাজ করা হতো। আমার এনাটমিকাল ইনভেস্টিগেশন শেষ হলে যে রেজাল্ট পাওয়া যেতো, সেটাকে বেজ করে বিহাভিওলার স্টাডি ডিজাইন করা হতো। নেক্সট ইয়ার জানুয়ারিতে যখন আবার ল্যাবে জয়েন করবো, ইনশাআল্লাহ তখন আমি বিহাভিওরাল এবং কম্পিউটেশনাল টিমে কাজ করবো।
তো এই ছিলো কাজের কথা। এবার আসা যাক রিসার্চ কালচার এর কথায়। আমি শুরু থেকেই দেশের সাথে এখানের আকাশ পাতাল তফাত দেখতাম। আমার কোসুপারভাইজর আমার জন্য মেইন সুপারভাইজরের সাথে মিটিং করে হোল ইউকের প্লান করে রাখতো। প্লেন গুলো ছিলো ইন ডিটেইলস – প্রতিদিনের সকালে এবং বিকেলে কি কাজ তা নির্ধারন করা থাকতো বুলেট পয়েন্টে। প্রতি সপ্তাহ শেষে কাজের ডাটা নিয়ে আমি, তিহানা এবং আমার কো-সুপারভাইজর মিটিং এ বসতাম। কোন ডাটাগুলো ভালো, কোনগুলো আবার রিপিট করতে হবে, কোনগুলো পেপারের কাজের জন্য জরুরি তার উপর ভিত্তি করে মিটিং শেষে পরবর্তী সপ্তাহের কাজের প্লান ফাইনাল করা হতো।
অন্যদিকে, প্রতিদিন ল্যাব এর সবাই আমরা একসাথে লাঞ্চ করতে যেতাম। বলে রাখা ভালো ফ্রেন্সরা লম্বা সময় ধরে লাঞ্চ করতে পছন্দ করে। তাই লাঞ্চের টেবিলে আমাদের হরেক রকমের গল্প হতো – হেনো কোন বিষয় নেই যেটা নিয়ে আমরা গল্প করতামনা। লাঞ্চ টেবিলে আমার সবচেয়ে ফেভারিট মানুষ ছিলো মাক্সিম (পিএইচডি স্টুডেন্ট) এবং এলইস (পোস্ট ডক)। আমরা লাঞ্চ টেবিলে গবেষনা নিয়ে কোন কথা বলতামনা – এটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগতো। লাঞ্চ থেকে ফিরে আমরা কফি অথবা চা হাতে আরো ১০-১৫ মিনিট আড্ডা দিতাম। এর পর যে যার কাজে যেতাম। ভালো লাগার বিষয়টা হলো কাজের সময় শুধুই কাজ, আর কিছু নই। আবার ফান করার সময় শুধুই ফান – কোন কাজ এর কথা নই।
ল্যাবের এ পরিবেশটার প্রেমে পড়ে গেছিলাম আমি। তাই আমি অনেক কাজ করতাম; তিনমাসে আমি এতো ডাটা জেনারেট করছিলাম যে ইন্টার্নশিপ ডিফেন্স এর পরে তিহানা আমকে সেকেন্ড ইয়ার এর যে ছয়মাস ইন্টার্নশিপ আছে তা তার ল্যাবেই করতে অফার করে বসলো। অন্যদিকে কো-অথর হিসাবে দুটা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স প্যাপার হয় (কারন আমার কাজ দুটো পিএইচডি স্টুডেন্টের প্রেজেক্টের সাথে ইনভল্ভ ছিলো)। সাথে একটা অরিজিনাল পেপার লেখা হচ্ছে, যতদুর জানি আমার নাম সেখানেও যাওয়ার কথা। সবমিলিয়ে তিনমাসটা কাজের হিসাবে অনেক ইম্পাক্টফুল ছিলো – আমার এবং তিহানার কাছে অনেকটা সময়ের কাজ বলে মনে হচ্ছিলো। হা হা হা!!
ইন্টার্নশিপ চলাকালিন সময়ে সেকেণ্ড ইয়ারের জন্য আবেদন করতে হচ্ছিলো। তো ছয়টা ফিল্ডের মধ্যে আমার মেজর টারগেট ছিলো নিউরসাইন্সের দুটো স্পেশালাইজেশন ট্রাককে ঘিরে। দুটো ট্রাকের মধ্যে একটা ছিলো শুধু নিউরোবায়োলজি, আর আরেকটা ছিলো কম্পিউটিশনাল নিউরসাইন্স এণ্ড নিউরইঞ্জিনিয়ারিং। তো স্বভাবত আমি দুটো ট্রাকেই আপ্লাই করি। বাট আমার এবং আমার প্রফেসরের পছন্দের তালিকাই ছিলো দ্বিতীয়টা। কেননা জগত যেভাবে আগাচ্ছে, পড়াশুনার সব সেক্টর এখন কম্পিউটেশনাল হয়ে যাচ্ছে। নিউরসাইন্স ফিল্ডের কথা চিন্তা করলে তো আরো বেশি। কিন্তু চিন্তা ছিলো এক্সেপ্টেন্স পাবো কি পাবোনা – এই নিয়ে। কেনোনা এই সাব্জেক্টটা এখানে অনেক প্রেস্টিজিয়াস এবং তার চেয়েও বড় কথা ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্র-ছাত্রীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় এক্সেপ্ট করার ক্ষেত্রে। আমি এবং তিহানা তাই একটু স্ট্রেস এ ছিলাম।
আমি লাইফ সাইন্স ফিল্ড থেকে আপ্লাই করায়, এক্সট্রা করে প্রোগ্রাম কোউর্ডিনেটর তিহানার কাছে রেকমেন্ডশন চেয়ে বসলো। আমি ল্যাবে কাজ কাম কেমন পারি, এই সাব্জেক্টে এক্সেপ্ট করলে সার্ভাইভ করতে পারবো কিনা – এসব নিয়ে আরকি। যাইহোক, তিহানা খুব ভালো করে লিখে দিলো রিকমেণ্ডসন লেটারটা – কারন সেও চাচ্ছিলো আমি এই সাব্জেক্টটা পাই। ফাইনালি, জুলাই এর ৩০ তারিখ রাতে কম্পিউটিশনাল নিউরসাইন্স এন্ড নিউরোইঞ্জিনিয়ারিং ট্রাক থেকে এক্সেপ্টেন্স পেলাম। ঘড়িতে তখন রাত বাজে ১১ টা ৫২। সাথে সাথে তিহানাকে মেইল করে জানালাম। মেইলটা পাওয়ার নিজের কাছে এতো খুশি লাগতেছিলো – বলে বোঝানোর মতো না।
৫ বছর আগে দেখা স্বপ্ন ফাইনালি পূরন হতে যাচ্ছে। যদিও এখন পুরো রাস্তাটাই সামনে পড়ে আছে। তারপরেও এখন আমি আমার স্বপ্নকে চাইলেই ছোয়ে দেখতে পারি। সময় নিয়ে ওব্জার্ভ করতে পারি। তার রং কি নীল না লাল তা নিয়ে গবেষণা করতে পারি। জীবনটা আসলেই মাঝে মাঝে সুন্দর। তবে কেউ কিছু মন থেকে চাইলে সে যে সেটা পাই, সেটার আরেকবার প্রমান পেলাম – তবে এবার নিজের জীবনেই। সেপ্টেম্বের ০৫ তারিখ থেকে ক্লাস শুরু। দেখা যাক, কি আছে এই পথে।
দিনশেষে গবেষণার পথে কেউ আগে হাটবে কেউ পরে হাটবে, কিন্তু যে যা আসলেই করতে চাই মন থেকে সেটা নিয়ে হাটতেছে কিনা তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সুন্দর জীবনটা টক্সিক মনে হবে।